(Translated into Bengali from Salman Rushdie’s article “Two crashes:
August 2000” in “Step Across this Line”- Collected non-fiction of Salman
Rushdie ,1992-2002.)
জীবনের গতি এতটাই বেড়েছে যে বেশী সময় ধরে কোন কিছুর উপর মনোযোগী হওয়াটা বেশ মুশকিল। যেকোনো ঘটনাবহুল খবরের চটজলদি মানে আমাদের চাই যেটা তার মর্মার্থ বুঝিয়ে দিয়ে কোনো পায়রার খোপে ফেলে দেবে; যাতে আমরা এগিয়ে চলতে পারি এই মোহে যে আমরা ঘটনাটা সম্বন্ধে কিছু বুঝেছি। দুটি সর্বনাশা দুর্ঘটনার অনতিকাল পরপরেই বিদ্বজনেরা এই ঘটনাদ্বয় সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ (সম্ভব হলে একটা পিকচার পোস্টকার্ডের পেছনে ) এবং গ্রহণযোগ্য মতামত জানাতে ব্যাস্ত। সংক্ষেপে, এই ঘটনা দুটির একটি হল কনকর্ড বিমানের দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রক্রিয়ার ভেঙ্গে পড়া।
এদুটির মধ্যে কনকর্ড বিমান দুর্ঘটনার ওপর “ইনস্ট্যান্ট মেসেজ”-মার্কা
মতামত খুব সহজেই বেরিয়ে আসে। হাজারো পণ্ডিতের মতে, এই ঘটনা স্বপ্নময় ভবিষ্যতের যবনিকার ইঙ্গিত বহন করে। যে দুনিয়ায় কোনদিন কনকর্ড বিমান
দুর্ঘটনায় পড়েনি, সেখানে এই বিমান যেন মানবজাতির সীমাতীক্রান্তের স্বপ্নের এক শোভাময়ী
বাহক ছিল । নতুন যে বাস্তব এখনো ফ্রান্স দেশের গনেস শহরের মাঠে ধিকিধিকি করে জ্বলছে
, তা স্বভাবতই আমাদের প্রত্যাশা কমিয়ে আনে। সীমাতীক্রান্তে মানুষ বাঁচেনা । ছবিগুলো আমাদের তাই বলছে। আমাদের বিমানে কিংবা আমাদের জীবনে
অথবা আমাদের ভবিষ্যতের কল্পনাতে আমাদের ভুলে যেতে হবে নতুন সীমালঙ্ঘনের উচ্চাশাকে। কিছুদিনের জন্য আমরা আমাদেরি তৈরী করা
সীমা অতিক্রম করে এক অলীক জগতে অবস্থান করলেও, আজ আমরা ফের পপাত ধরণীতলে।
দুর্ভাগ্যক্রমে অন্য দুর্ঘটনাটি , বিশ্লেষণের
পর , ঠিক উলটো ইঙ্গিত বহন করছে। গত এক সপ্তাহে আমি যেখানেই গেছি বা যা কিছু দেখেছি কিংবা পড়েছি অথবা শুনেছি ; সর্বত্রই একটা প্রশ্ন
বারবার উঠে এসেছে। ……যদি তোমার ওপর ছেড়ে দেওয়া হতো , তাহলে জেরুসালেমের ধাঁধার সমাধান
কিভাবে করতে? নৈশভোজে কিংবা সম্পাদকীয়তে , এই ব্যাপারে সবাই একমত যে জেরুসালেমকে একটি
স্বাধীন শহরে পরিবর্তিত করা উচিত। যাকে বলা
যেতে পারে বিশ্বনগরী। আলাদা করে ইসরায়েলেরও নয় আবার পালেস্তিনেরও নয় কিন্তু একই সঙ্গে
দুই দেশের রাজধানী । ব্যাপারটা শুনতেও যেরকম ন্যায়সঙ্গত লাগে, তেমনি বোধ হয় বাস্তবেও করণীয়।
হ্যাঁ, এটা একটা গ্রহণযোগ্য ধারণা ………
কি বলছেন? আর একটা নতুন “ব্রেকিং নিউজ” দেখাচ্ছে? তাড়াতাড়ি “সিএনএন” চ্যানেলটা ্ধরুন ত!
……আচ্ছা, ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন আমরা
নাহয় আরো একটু গভীরেই যাই। ব্যাপারটা খুবই সরল। বারাকের সরকার কিছুটা জমি আগেভাগে ছেড়ে
দিলেও, ইসরায়েলকে দিয়ে অপরিহার্য কিছু ছাড় দেয়াতে রাজী করাতে হলে আমেরিকাকেই ইসরায়েলের
হাত কিঞ্চিত মোচড়াতে হবে। আর যেহেতু আরাফতও আপসবিমুখ ( যার অন্যতম কারণ মুবারাকের প্ররোচনায় তার মুখ্য আরব মদতকারীদের নাছোড়বান্দা লাইন যে,
“হয় পূর্ব জেরুসালেম আমাদের নয়ত কিছুই নয়”), সেহেতু আমেরিকাকে আরব দেশগুলোর কিঞ্চিত
হাত মোচড়াতে হবে যতক্ষণ অবধি তারা রাজী হচ্ছে , “একমাত্র সম্ভাব্য সমাধানে”।
……দেখুন, একটা কথা কি জানেন? মাঝেমাঝে
মানবজাতিকে তাদের সম্মুখের বাধার থেকেও বড় হয়ে উঠতে হবে। আমাদের, ওদের সবাইকেই আবিষ্কার
করতে হবে নিজেদের মধ্যে যে কি করে আমরা, ওরা সীমাতিক্রান্ত করতে পারি। কারন শান্তি
হচ্ছে ভবিষ্যতের সেই স্বপ্ন যাকে অস্বীকার করা যায়না।
চটজলদি বিশ্লেষণকারীদের সামনে তাই এখন
সাদা এবং কালোর মধ্যে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব।
যদি কনকর্ড বিমান দুর্ঘটনার “মর্মার্থ” সঠিক হয়, তাহলে মানবজাতির স্বপ্নের দিন শেষ।
অতএব , মধ্যপ্রাচ্যেও শান্তির আশা করাটাই মিছে। এবং যখন ইন্তিফাদা আরো উগ্র আন্দোলনে
প্রত্যাবর্তন করবে, ( উগ্র কারণ, পালেস্তিনরা
এখন ইঁটপাথরের বদলে বন্দুক দিয়ে লড়াই করে ), ইসরায়েল তার সর্ব সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে
পড়বে এবং ক্রমশই এই অঞ্চলটি যুদ্ধের রাস্তায় পদার্পণ করবে। কিন্তু
যদি ক্যাম্প ডেভিড-পশ্চাত কালে, স্বাধীন জেরুসালেমের
গঠন সম্ভবায়িত হয় তাহলে সেটা আমাদের নতুন আশার
স্বপ্ন দেখাবে। ভবিষ্যতের ধারণা নবআবিষ্কারে এক নতুন স্বপ্নরাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল
করবে । অনেকটা “স্টার ট্রেক” সিনেমাতে দেখানো অতিপ্রাযুক্তিক বিস্ময় ভরা স্বপ্নরাষ্ট্রের
মতন – আরো নিরাপদ, আরো সস্তায় কনকর্ড, (হয়ত
বা সর্বসাধারণের জন্য কনকর্ড ) সহাবস্থান করবে মানবসম্পর্কের সর্বজনীন ভাতৃত্বের সঙ্গে।
বাস্তবে অবশ্য এই দ্বন্দ্বের কোনও অস্তিত্ব
নেই। বাস্তব জগতে , বর্তমান সবসময় ত্রুটিপূর্ণ এবং ভবিষ্যত (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) আশার
মুক্তাঞ্চল। মূল সমস্যাটা হল কোনো নতুন খবর বা ঘটনাতে আমরা কি ভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া
ব্যাক্ত করতে চাই। এটা কি ভালো খবর? নাকি এটা
খারাপ? আমরা এটা থেকে কি পেতে পারি? এখান থেকে আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে কি জানতে পারি?
বা অন্যদের সম্বন্ধে? কোন কোণ থেকে এটাকে দেখা উচিত? কে দোষী? রিমোট- টা হাতে দাও,
চ্যানেলগুলো ঘুরিয়ে দেখি! সুসান সন্তাগ তার এক অনবদ্য রচনায় ( “অসুখের রুপালঙ্কার”) সাবধান করেছিলেন এই
ধরনের আধা-অতীন্দ্রিয় চিন্তাভাবনার ব্যাপারে, যেখানে মানুষ অসুখ এবং অসুস্থতার মধ্যে
খোঁজে কোন অভিশাপ অথবা কোন বিচারের রায়। এই একই যুক্তি খাটে খবরের ব্যাপারে যেখানে
আমরা হেডলাইন - যোগ্য কোন ঘটনার মধ্যে উন্মাদের মত খুঁজে চলি কোন প্রতীকী মর্মার্থ
। বিমান দুর্ঘটনার মতো যে কোন সঙ্কটকে, চটজলদি রুপালঙ্কারের মোড়কে-পোরা খবর চেষ্টা
করে কোন সাধারন সামাজিক চিহ্নে রুপান্তরিত করার। সময় বিশেষে , বিপজ্জনক ভাবে, সেই চেষ্টা
ক্যাম্প-ডেভিডের আলোচনার অতি-বিশদীকরন করে
যতক্ষণ না অসম্পূর্ণ সমস্যাটা নানা প্রতিধ্বনি এবং অনুরণনের আবরণে ঢাকা পরে যায়। খবরের মতন চটজলদি রুপালঙ্কার সাধারণত অতিরিক্ত আবেগপূর্ণ , প্রায়শই আধা-
রাজনৈতিক এবং সর্বদাই অগভীর। এটা যেমন
খবরের মুখ্য চরিত্রকে হয় দেবতা বানায় নয়ত দানব তেমনি আমাদের প্রতিক্রিয়াকে হয়
ভোঁতা করে নয়ত আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
No comments:
Post a Comment